গ্রেপ্তারের দিন থেকে সাজা কার্যকর- অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান
পৃথিবীর যে কোনো আদালতে শেখ হাসিনার একই সাজা হবে- চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম
আজকে বাংলাদেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন, আজকে বাংলাদেশের মাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ ঘটনা ঘটেছে- আইন উপদেষ্টা
আদালত ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন রাজসাক্ষী ও সাবেক আইজিপি মামুন
ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি অভিযোগে ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই অপরাধের মামলায় মামলার রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে পলাতক আসামিদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন। গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় প্রসিকিউশন ও আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক ও সমাপনী বক্তব্য শেষ করেন। সে দিন ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রসিকিউশন পক্ষে মামলার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। এ সময় আসামিদের স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, এবিএম সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ১৩ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করার দিন নির্ধারণ রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে বিগত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায়ের জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করে দেন।
গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী (আসামি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মামলার আসামিদের চরম দণ্ড প্রত্যাশা করে ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
টানা তিনদিনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে আসামিদের খালাসের আবেদন করেন। সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়েও যুক্তি খণ্ডন করেন আমির হোসেন। বিশেষত রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সাক্ষ্য সামনে আনেন। একইসঙ্গে তাদের দেয়া সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এ মামলার রাজসাক্ষী মামুন বাঁচতে চাইছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না বলেই জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তার সাক্ষ্য এ মামলায় প্রভাব পড়বে না বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন এই আইনজীবী। পরে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ওই দিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন। একইদিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
শেখ হাসিনার রায় ঐতিহাসিক : অন্তর্বর্তী সরকার
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল সোমবার চিফ অ্যাডভাইজার, জিওবি (হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট)-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই বিবৃতি প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায়কে ঘিরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে, সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয় সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সবাইকে সতর্ক করছে।
সরকার আরও স্পষ্ট করে জানাচ্ছে, যে কোনো ধরনের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বা জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। এর আগে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
রায়ে আমি সন্তুষ্ট: আইন উপদেষ্টা
শেখ হাসিনার বিচারের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে আমি বিস্মিত না বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি দেয়া হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকে বাংলাদেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন, আজকে বাংলাদেশের মাটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ ঘটনা ঘটেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে শত শত মানুষের মৃত্যু হাজার হাজার মানুষের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা অঙ্গহানির ঘটনা বিকলাঙ্গ হওয়ার ঘটনার জন্য যে নৃশংস খুনি দায়ী ছিল আজকে সেই শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। একই সঙ্গে তার প্রধান সহযোগী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আজকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়ের দিন আজকে আমার বিশেষ করে মনে পড়ছে যারা জুলাই গণআন্দোলনকালে প্রাণ হারিয়ে ছিলেন আবু সাঈদের কথা, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিন, আনাসসহ সবার কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে আজকে তাদের বিদেহী আত্মা হয়তো একটু শান্তি পাবে। আজকে তাদের শোক সন্তুষ্ট পরিবারের কথা মনে পড়ছে, হয়তো এ রায়ের মধ্যে দিয়ে তারা সামান্য হলেও সান্ত্বনা পাবেন।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট কিন্তু আমি বিস্মিত না। কারণ শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে জোরালো বিস্তৃত প্রমাণ রয়েছে তাতে পৃথিবীর যেকোনো আদালতে বিচার হলেই তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, আমি আজকে আরেকটা কথা বলতে চাই, সেটা হচ্ছে আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আবার চিঠি লিখবো। ভারত যদি এ গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেয়া অব্যাহত রাখে তাহলে ভারতকে বুঝতে হবে এটা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে এটা শত্রুতা এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় আচরণ। আজকে একটা বিচার হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা যতদিন আছি বিচারকার্য পূর্ণ বেগে চলবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি এ বিচারের জন্য বিচার সংশ্লিষ্ট যারা আছেন বিশেষ করে আমাদের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল তার সহযোগীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা যতদিন আছি বিচারকার্য পূর্ণ উদ্যমে চলবে এবং আমরা আশা করি আগামীতে যে সরকার নির্বাচিত হবে এ বিচারের গুরু দায়িত্ব থেকে কোনো অবস্থাতেই যেন তারা পিছপা না হয়।
গ্রেপ্তারের দিন থেকে সাজা কার্যকর: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে সাজা দিয়েছে সেটি আসামিরা যেদিন গ্রেপ্তার হবে সেদিন থেকে কার্যকর হবে।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, মামলায় দুজন আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর একজন রাজসাক্ষী হওয়ায় সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
তিনি জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে সাজা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলায় যুগান্তরকারী রায় হয়েছে, যা প্রশান্তি আনবে ও বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে, বলেছেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য একটি অভিযোগ তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অ্যাপু্রভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার রায়ের জন্য গতকাল সোমবার দিন ঠিক করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সমপ্রচার করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় গতকাল সোমবার ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রধানমন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শেষে সাজার মুখোমুখি হয়েছেন। মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
পৃথিবীর যে কোনো আদালতে শেখ হাসিনার একই সাজা হবে : চিফ প্রসিকিউটর
বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে বিচার কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল সোমবার দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির মামলায় ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ সব আন্তর্জাতিক নর্মস, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটির মতো কমপ্লেক্স অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে।’
রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্য প্রমাণগুলো উতরে যাবে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজকে যেসব আসামিকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই একই শাস্তি প্রাপ্ত হবে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দেয়া রায় প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির প্রতিজ্ঞা। আমি মনে করি, এই রায় কোনো ধরনের অতীতের প্রতিশোধ নয়। এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির প্রতিজ্ঞা। এটি ন্যায়বিচারের জন্য যাত্রা। এই রায় প্রমাণ করেছে অপরাধী যত বড় হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধী হোক, অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রথা, মান বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম। বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করতে পেরেছে।’
এ রায়ের ফলে যে এক হাজার ৪০০ তরতাজা তরুণ প্রাণ দেশে স্বৈরশাসন অবসান করার জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে যদি সামান্য একটু স্বস্তি আসে, সেটাই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘একটি বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার আমাদের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেটাতেই আমাদের সাফল্য।’ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। একইসঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আদালত ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক আইজিপি মামুন
আদালত ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গতকাল সোমাবর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ফাঁসির যোগ্য হলেও কম সাজা দেয়া হয় রাজসাক্ষী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের অপরাধও প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পরিকল্পিত ও ব্যাপক পরিসরে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় স্ক্রিনে রায় ঘোষণা সরাসরি সমপ্রচার করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রচার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজেও।
প্রসঙ্গত, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে জুলাই অংশীজনদের উচ্ছ্বাস
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পরপরই হাইকোর্টের সামনে অপেক্ষারত জুলাই আন্দোলনকারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায় ঘোষণার পর থেকেই হাইকোর্ট এলাকায় সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় গণঅধিকার পরিষদ, জুলাই মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা স্লোগান দিয়ে রায়কে স্বাগত জানান। এ সময় পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়া এদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী বনে যাওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছর কারাদ্ল দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে সন্তুষ্ট আবু সাঈদের পরিবার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডে রায়ে সন্তুষ্ট শহীদ আবু সাঈদের পরিবার।
রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী তার পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির কথা জানায়। রমজান আলী বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি হয়েছি। তবে রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করেই যেন শেষ না হয়। দ্লপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাই। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ছেলেকে হারিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা তো কোনোদিন পূরণ হবে না। আর যেন আমার মতো কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শেখ হাসিনাকে দেশে এনে রায় কার্যকরের দাবি শহীদ মিরাজের বাবার
জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির ফাঁসির দাবি নিয়ে ট্রাইবুনালের সামনে জড়ো হয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল সোমবার সকালে ট্রাইবুনালের গেটে অবস্থান নেন তারা। পরে ভেতরে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন জুলাইয়ে আহত যোদ্ধারাও। উত্তরা থেকে আসা জুলাই আন্দোলনে আহত আব্দুর রহমান বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। জুলাইয়ে আমার যেসব ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের দাবি নিয়ে আমরা এসেছি। শুধু ফাঁসির আদেশ দিলেই হবে না, শিগগিরই ভারত থেকে এনে রায় কার্যকর করতে হবে।
জুলাইয়ে শহীদ মিরাজের বাবা আব্দুর রব বলেন, আমার তরুণ ছেলেটা খুনি হাসিনার নির্দেশে নির্মমভাবে খুন হয়েছে। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। তাকে যেন দেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করা হয় এটাই আমার চাওয়া। মিরাজসহ সারাদেশে যাদের হত্যা করা হয়েছে সবার জন্য ন্যায় বিচায় চাই।
এদিকে সোমবার বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ রায় ঘোষণা করা হবে। শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়ানো হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ-র্যাব, এপিবিএন-বিজিবির পাশাপাশি নিয়োজিত রয়েছে সেনাবাহিনী। তৎপর রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সীমিত করা হয়েছে জনসাধারণের চলাচলও।
ট্রাইব্যুনালের রায় প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দাবি করেন এই রায় জনগণ মানে না, মানবেও না।
নানক বলেন, ‘আজ যে রায় ঘোষণা হয়েছে, বাংলার জনগণ সেই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। অবৈধ আদালত মাত্র দুই মাসে মামলাটি শেষ করেছে। ৮৪ জন সাক্ষীর কথা বলা হলেও হাজির করা হয়েছে মাত্র ৫৪ জনকে। আদালত চলেছে ২০ দিন, অথচ প্রধান বিচারক এক মাস অনুপস্থিত ছিলেন।’ তার অভিযোগ, প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে ‘জনগণের প্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে’ এই রায় দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘অচিরেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব।’ যদিও দলটির কার্যক্রম সরকারি নির্দেশে স্থগিত রয়েছে, তবুও রায়ের প্রতিবাদে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা শাটডাউন পালনের আহ্বান জানান জাহাঙ্গীর নানক। রায় ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েছে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

