
স্বৈরাচার হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন রাষ্ট্রপতি: রিজভী
ন্যাশনাল ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের প্রসঙ্গে টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তো শেখ হাসিনার নিয়োগ দেওয়া। রাষ্ট্রপতি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন, পরে যুবলীগ করতেন। শেখ হাসিনা মনোনীত রাষ্ট্রপতির কণ্ঠের সুর ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। উনি (রাষ্ট্রপতি) বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি’। যে স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য লোকের কাছে চলে যায়, সে কি ডিভোর্স লেটার দিয়ে যায়? আমরা জানি তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণেও বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালনের চাইতে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালনে এখন বেশি ইচ্ছুক। প্রথম দিকে ছাত্র-জনতার যে উত্তাল যে রূপ, সে সময় কিছু বলেননি। কিন্তু এখন ক্রমান্বয়ে শেখ হাসিনার অনুগামী হয়ে কথা বলছেন। কোনো ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে তিনি আছেন কিনা দেখতে হবে।’
রিজভী বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেও শেখ হাসিনার কোন অনুসূচনা নেই। তিনি (শেখ হাসিনার) হিংস্র মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করছেন। পতনের পরও তার নিষ্ঠুরতা এখনও থামেনি। পরাজিত হওয়ার পরও বর্বরতা থামেনি। পালিয়ে গিয়ে এখনও ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নির্দেশ দিচ্ছে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসররা নানা জায়গায় আছে। ওদের হাতে আছে প্রচুর টাকা। সব টাকা পাচার করতে পেরেছে তা না। কিছু টাকা তো ওদের হাতে আছে। কালো টাকা ও লাইসেন্স বিহীন অস্ত্র প্রয়োগ করবে জনগণের ওপর। দেখাতে চাইলে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল। দেশকে বিক্রি করে দিয়ে ক্ষমতায় থাকার শেখ হাসিনা যে রাজনীতি আবারও তা পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সেটা জনগণ হতে দেবে না।’
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্র চালাতে বর্তমান সরকারের যে সংস্কার করা দরকার তা দ্রুত শেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার পুরো রাষ্ট্র সংস্কার করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার যে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। অপরাধীরা সব পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দোসররা দেশে আবারও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের আমলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না। অবৈধ অস্ত্র এখনও উদ্ধার হচ্ছে না। দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে হবে মানুষের সাধ্যের নাগালের মধ্যে সবকিছু রাখতে হবে। ’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর বিএনপি এই নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে ঢাকার অদূরে সাভার এবং আশুলিয়ায় সাতটি শহীদ ও তিনটি আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রতিনিধি দল।
প্রথমে সাভারে ব্যাংক টাউনে শহীদ ইয়ামিনের বাসায় শহীদ ইয়ামিন, শহীদ নাফিসা হোসেন ও আহত ইসমে আজমের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়। এরপর আশুলিয়ার কালার টেকের কাইচা বাড়িতে শহীদ মামুন বিপ্লবের বাসায় শহীদ মামুন বিপ্লব, শহীদ আব্দুস সাবুর, শহীদ সাজ্জাদ, শহীদ বাইজিদ এবং আহত হান্নান ও আকাশ মিয়ার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে প্রতিনিধি দল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খোন্দকার আবু আশফাক, বিএনপি নেতা আবুল কাশেম, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সংগঠনটির সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, শাকিল আহমেদ, শাহাদত হোসেন, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি, সাবেক ছাত্রনেতা মঞ্জুর মোর্শেদ ইমন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুর রহমান তুষার, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আউয়াল প্রমুখ।