
বিশেষ প্রতিবেদক : স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে রাজশাহী বিআরটিএ’র অফিস প্রাঙ্গনে। সেবা দিতেও যেন স্বস্তি বোধ করছেন কর্মকর্তারা।
অফিস প্রাঙ্গনে আর দেখা মিলছে না গ্রাহকদের সেই উপচে পড়া ভিড়। পরীক্ষায় বসতে নেই কোন বাড়তি ঝামেলা। একসময় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় লাগতো আঙ্গুলের ছাপ দিতে। বর্তমানে পরীক্ষার দিন প্রথমেই আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে (বায়োমেট্রিক) সম্পূর্ণ করে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। এতে করে সময়ের সাথে সাথে ঝামেলা নেই বললেই চলে।
পরীক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে সকল কাগজপত্র বৈধতা পেলে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে বাড়িতে বসেই লাইসেন্স পাচ্ছেন গ্রাহকরা। বিআরটিএ অফিসে নেই আগের মত কোন বাড়তি ঝামেলা। অনলাইনের মাধ্যমে উন্নত সেবা পেয়ে কর্মকর্তাদের প্রতি স্বস্তি প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনলাইনের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে সেবা পাচ্ছেন বিআরটিএ`তে আসা গ্রাহকরা। আগে যেখানে দীর্ঘ সময় ঘুরতে হতো দালালদের চক্করে, বর্তমানের চিত্রটা বলছে ভিন্ন কথা। বিআরটিএ`তে আসা গ্রাহকরা অনলাইনের মাধ্যমে ১০ মিনিটেই তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার মালিকানা পরিবর্তন করতে বিআরটিএ`তে অবস্থান করছেন মোহনপুর উপজেলার হাসেম আলী। তিনি বলেন, আগে দীর্ঘ সময়ের ভোগান্তিসহ অতিরিক্ত টাকা গুনতে হতো সেখানে আজ দ্রুত সময়ের মধ্যে দালাল সিন্ডিকেট ছাড়াই কাজটি সম্পূর্ণ করতে পেরে আনন্দিত।
পবা উপজেলার আতিকুর নামের এক ব্যক্তি বলেন, দালাল সিন্ডিকেট ছাড়াই গত জানুয়ারি মাসে বৈধ ভাবে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আজ বিআরটিএ`তে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে আসা। কোন প্রকার ঝামেলায় পড়তে হয়নি কিন্তু পূর্বেও দালালদের পিছনে লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে গ্রাহকদের। বর্তমানে বিআরটিএ’র এই উন্নত সেবা ও দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা খুশি।
রাজশাহী বিআরটিএ অফিস কার্যালয়ের ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। বেশিরভাগই প্রাইভেটকার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও মোটরসাইকেল। কিন্তু আগের মতো বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। সিরিয়াল অনুযায়ী প্রতিটি যানবাহন ফিটনেস পরীক্ষা করছে। নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা গ্রাহকরাও লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা গ্রহন ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে,সরকার পতনের পর অফিসকে দালাল ও তদবিরবাজ মুক্ত করতে কঠোর অবস্থান নেয় রাজশাহী বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান ও বিশেষ নজরদারিতে দেখা মিলছে না দালালদের সেই দৌরাত্ম্যের চিত্র।
বিআরটিএ অফিস কম্পাউন্ডে বরাবরই ‘দালাল দৌরাত্ম্য’ ওপেন সিক্রেট ছিলো। গত বছর থেকে চিত্র পরিবর্তন করতে কঠোর ভূমিকা পালন করে আসছেন রাজশাহী বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ ও রাজশাহী বিভাগের পরিচালক শফিকুজ্জামান ভুঞা।
গত বছর থেকে রাজশাহী বিআরটিএ অফিসে এবং আশেপাশের চায়ের দোকানসহ কম্পিউটার কম্পোজের দোকানপাট গুলোতে বিআরটিএ পরিচালনা করে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানের পাশাপাশি মোটরযান চালকদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন চলে আসছে এই অফিসে।
জানতে চাইলে বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন,অফিসে যোগদান করার পর থেকে মূল লক্ষ্য ছিলো অফিসটাকে দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত করা।
নিয়মিত গ্রাহকদের সচেতন করা হচ্ছে, যেন দালালদের খপ্পরে কেউ না পড়েন। এছাড়াও সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষদের লাইসেন্স কিংবা অন্য কোনো ব্যাপারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ডেস্কে নিয়ে কাজ সারার জন্য পরামর্শ ও প্রদান করা হচ্ছে।
বিআরটিএ’র রাজশাহী বিভাগের পরিচালক শফিকুজ্জামান ভুঞা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় দুর্ঘটনারোধে চালকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সড়ক আইন মেনে চলতে বিভিন্ন সভা সেমিনার এবং প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছি।
তিনি আরো বলেন, গ্রাহকরা সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে সেবা নিতে পারছেন। কোনো মাধ্যম বা দালালের প্রয়োজন নেই।