
দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ পৌরসভা থেকে সাধারণ নাগরিকরা কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভার বাসিন্দারা জানান, ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারাই এখনও পৌরসভার বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। সেবা নিতে গিয়ে এখনও পদে পদে দিতে হচ্ছে ঘুষ আর হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভায় এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন চেক জালিয়াতি মামলার আসামি, নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করা ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁদ। এ ছাড়াও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও গত ১৫ বছর ধরেই দায়িত্বে আছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইজিবাইক চালক বলেন, ‘গত বছর অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ইজিবাইকের লাইন্সেস করেছি। এই বছর আবার ইজিবাইকের লাইসেন্স করতে গিয়ে আগের মতো ঘুষ দাবি করা হচ্ছে। এই জন্য আর ইজিবাইকের লাইন্সেস করিনি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে রহিম নামে পৌর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এক হাসিনার পতন হয়ে কোনও লাভ নেই। হাসিনার অনুসারীরা অনেকেই এখনও পৌরসভায় চাকরি করছে। আগের মতোই তারা এখনও সিন্ডিকেট তৈরি করে নাগরিকদের হয়রানি করেই যাচ্ছে। পৌরসভা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের এখনই সরাতে করতে হবে।’
এদিকে, আনারুজ্জামান আজাদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে গত ১৮ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ঝিনাইদহ পৌরসভার বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন দীর্ঘ ১৮ বছর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত বিনা ভোটের মেয়রের তত্ত্বাবধানে কাজ করেছেন। তিনি অবৈধভাবে পৌরসভার রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ না করে বিনা ভোটের মেয়রের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ইতোপূর্বে সাধারণ জনগণ কোনও অভিযোগ করার সাহস পাননি।
পৌর এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, দীর্ঘ ১৮ বছর সরকারের বরাদ্দ করা বিভিন্ন প্রকল্পের ও এডিবির কোটি কোটি টাকার কোনও কাজ হয়নি। একটু বৃষ্টিতে শহরের পানি নিষ্কাশন হয় না। এ ছাড়াও বাজারের মধ্যের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ।
রাশেদ নামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘মশার উৎপাতে এলাকার মানুষ নাজেহাল। পৌরসভা থেকে মশক নিধনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হলেও তার কোনও কার্যক্রম চোখে পড়ে না। শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কবাতিগুলো এখনও নষ্ট হয়ে আছে। এ ছাড়াও অভিযোগ আছে, সড়কের বাতি কেনার জন্য ব্যাপক টাকা আত্মসাৎ করেছেন কর্মকর্তারা। দ্রুত এসব দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারের সমর্থকদের পৌরসভা থেকে সরানো হোক। তবেই নতুন প্রজন্মের স্বাধীন বাংলাদেশের সুফল পাবেন বাসিন্দারা।’
অভিযোগের ব্যাপারে প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার কোনও সত্যতা নেই। নিয়ম মেনেই সব কাজ করা হয়। আর কাজ করার নির্দেশ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। আমাদের কিছুই করার নেই।’
এ ব্যাপারে পৌরসভার প্রশাসক রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আগে কী হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না। পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে কোনও প্রকার অনিয়ম করার সুযোগ নেই।’