
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এবার ইউক্রেন এই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে । গতকাল মঙ্গলবার ছিল যুদ্ধের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের হাজারতম দিন। এই সহস্রতম দিনেই হামলা চালায় ইউক্রেন।
তবে এ ধরণের হামলায় পরমাণু অস্ত্র দিয়ে এর জবাব দেওয়ারও হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিল রাশিয়া। মস্কোর কড়া হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করেই ইউক্রেনের গতকালের এ হামলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও বিধ্বংসের রূপ নিতে পারে। এবার এমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে।
এই হামলায় হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার যুদ্ধের নতুন ধাপ। এর জবাব যথাযথভাবে দেওয়া হবে বলে।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। তবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঁচটি ভূপাতিত ও একটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ব্রাজিলে জি২০ সংবাদ সম্মেলনে হামলার বিষয়ে বলেন, ‘তারা উত্তেজনা বাড়াতে চায়, এটা তার একটি সংকেত।’
ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এটিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা যুদ্ধের গুণগতভাবে নতুন পর্যায় হিসেবে গ্রহণ করব ও যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
এ হামলা প্রসঙ্গে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, এদিন বিকেলে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইউক্রেন। সেগুলোর সবকটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করা হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ওই এলাকায় একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরে গেলেও কেউ হতাহত হননি।
এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা রুশ সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে ব্রিয়ানস্ক এলাকায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে। হামলার পর ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এই হামলায় এটিএসিএমএস ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সেটা তারা নিশ্চিত করেনি।
প্রসঙ্গত, মাত্র কয়দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। তার এই অনুমতি যুদ্ধকে আরও সংঘর্ষের দিকে প্রসারিত হওয়ার আশঙ্কা করে তখন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, ‘‘বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো।’’
এদিকে বাইডেনের অনুমতির পর ইউক্রেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে পারে, সে আশঙ্কা রাশিয়া আগে থেকেই করছিল।
এ কারণেই গতকাল নিজেদের পরমাণুনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে এর জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। শুধু তাই নয়, কোনো জোটের সদস্যদেশ যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পুরো জোটই এই আগ্রাসন চালিয়েছে বলে বিবেচনা করতে পারবে ক্রেমলিন।
উল্লেখ্য, আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করা রাশিয়ায় এই প্রথমবারের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাল ইউক্রেন।
এমনই এক সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধের হাজারতম দিন উপলক্ষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘কে শেষ পর্যন্ত জিতবে—যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। হয় শত্রুদের হারিয়ে ে আমরা জিতব, না হয় ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে শত্রুরা জিতবে।’