
দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন দল গোছানোর পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটের মাঠ সাজাচ্ছে । আসন্ন নির্বাচনে শতাধিক আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিতে চান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে বিভিন্ন আসনে তরুণ নেতাদের নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে তিনি প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এবার সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য কিছু আসনে ছাড় দেবে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সমমনা পাঁচটি দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে তাদের নির্বাচনী আসনে কাজে সহায়তার বিষয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে দল গোছানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এজন্য ঢাকা ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৯ জন সিনিয়র নেতাকে। এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা এবং তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে সারা দেশ সফর করছে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সভাসহ নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন দলের নেতারা। বিএনপি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ধানের শীষের প্রতীক তুলে দিয়ে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতের সব সংস্কার কাজ শেষে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন করতে চায়। তবে বিএনপি অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। যতবারই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন, ততবারই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার পাশাপাশি দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নির্বাচনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার সাধন করা এবং নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়া। এটা আগেও বলেছি, সেদিনও (গত বুধবার) আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে ডেকেছিলেন, সেখানেও আমরা ভালোভাবে এটা উপস্থাপন করেছি।
খান, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল, নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রকৌশলী আমিরুল মোমিন বাবলু, জয়পুরহাট-২ আসনে অ্যাব নেতা প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম, সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রকৌশলী মো. আইয়ুব হোসেন মুকুল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পুসহ অনেকেই মনোনয়নের আশায় কাজ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের আত্মার সম্পর্ক। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সব ধরনের জনসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সব সময়ই এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনো পাশে থাকার চেষ্টা করছি।
নোয়াখালী-৫ আসনের বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনায় তিনি তার এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেলে তিনি বিজয়ী হবেন।
চট্টগ্রাম-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায়। স্থানীয় জনগণ তাকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান এবং দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
মৌলভীবাজার-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বদরুল আলম শিপলু বলেন, অন্য বারের তুলনায় এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। স্থানীয়রা আগামী নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।
টাঙ্গাইল-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন, জনগণ ভালো সাড়া দিচ্ছে।
প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম বলেন, জয়পুরহাট-২ আসনের মানুষ তাকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চান। তিনি নানাভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা জনগণকে পৌঁছে দিচ্ছেন। জনগণ তা গ্রহণ করছে, প্রশংসাও করছে।
আরও বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী একই রকম অনুভূতি ব্যক্ত করেন।