
সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘনকুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে কনকনে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। যা অব্যাহত থাকতে পারে।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা হঠাৎ ৮ ডিগ্রিতে নেমেছে। ফলে কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তাই দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে প্রতিবছর এ জেলায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা পড়ে। গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না এ জেলায়। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছে এই অঞ্চলের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
আজ শুক্রবার লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলায় দেখা যায়, ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও পশ্চিমা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলুর আবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
লালমনিরহাট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে লালমনিরহাটে শীতের দাপট খুব বেশি পরিলক্ষিত না হলেও গত তিন দিনে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। লালমনিরহাট-সহ আশে-পাশের এলাকায় তাপমাত্রা এখন ১০ থেকে ১২ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন। বৃহস্পতিবার রাতে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। মৃদু বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কনেকনে ঠান্ডায় কষ্টে পড়েছে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা।
এদিকে আজ শুক্রবার ভোর থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশা দেখা গেছে। কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে নগরী। পুরো রাজধানীতে জেঁকে বসেছে শীত।
শীত থেকে বাঁচতে সকালে ভারী শীতবস্ত্র পরে কর্মস্থল ও অফিসমুখী হয়েছেন নগরের মানুষজন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই জানুয়ারিতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৫টি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। কোনো কোনো শৈত্যপ্রবাহের ফলে দেশের তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, আগামীকাল ৪ জানুয়ারি অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা থাকার আশঙ্কা রয়েছে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। হালকা থেকে মাঝারি মানের কুয়াশার উপস্থিতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে দেশের অন্য ৫টি বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে।
তিনি আরও জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি দেশে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা থাকার আশঙ্কায় রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো এবং চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। হালকা থেকে মাঝারি ঘনত্বের কুয়াশার আশঙ্কা করা যাচ্ছে খুলনা বিভাগের উত্তরের জেলাগুলো এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর উপরে।
আগামী ৬ জানুয়ারি দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা থাকার আশঙ্কা রয়েছে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে।
এছাড়া আগামী ৭ জানুয়ারি পুরো দেশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা থাকার আশঙ্কা রয়েছে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনিসংহ বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। এরপর এই বৈরী আবহাওয়া অনুকুলে আসার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।